মুফতি হুমায়ুন আইয়ুব
বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ দরিদ্র জনবহুল একটি দেশ। এ দেশের বৃহত্তর জনমানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। যারা বঞ্চিত জীবনের মৌলিক অধিকার- অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা থেকে। বেকারত্বের অভিশাপে তারা পঙ্গু। রীতিমতো চলে কর্মসংস্থানের জন্য হাহাকার। অথচ দরিদ্র, অভাবগ্রস্ত, বেকার, অক্ষম জনগোষ্ঠীর আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই ইসলামে জাকাতের বিধান। অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণ, স্বনির্ভর দেশগঠন জাকাতের প্রধান উদ্দেশ্য।
সারাবছর যে কোনো সময় জাকাত আদায়ের বৈধতা থাকলেও সওয়াব বেশি পাওয়ার আশায় আমরা রমজানে জাকাত দিই। কারণ সালমান ফারসি সূত্রে রাসূল (স) বলেছেন- হে মানব জাতি একটি বরকতময় মাস তোমাদের জন্য ছায়া বিস্তার করে। এই মাসে একটি ফরজ আদায় করলে অন্য মাসে ৭০টি ফরজ আদায় করার সওয়াব পাবে [মিশকাত-১৮০]।
জাকাত বিশেষজ্ঞ একটি কমিটির জরিপে বাংলাদেশের বিত্তবানদের সম্পদ নিখুঁত হিসাব করে প্রতিবছর জাকাত আসে দুই হাজার কোটি টাকা (বর্তমানে কমবেশি হতে পারে)।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার আজ ৫৩ বছর। প্রতিবছরই ধর্মপ্রাণ মুসলমান গতানুগতিক ধারায় জাকাত দিয়ে আসছেন। স্বনির্ভর বাংলাদেশ অথবা দারিদ্র্য বিমোচনে জাকাত কী ভূমিকা পালন করছে? বছরে কয় হাজার পরিবার অভাবমুক্ত হয়ে স্ব্যচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করছে? এসব প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে বার বার। প্রতিবছর নিয়ম মেনে জাকাত আদায় করলে গরিবের স্থায়ী কল্যাণের ব্যবস্থা হতো। কারণ ইসলামের চেতনা হলো- দরিদ্র ব্যক্তিকে এই পরিমাণ জাকাতের অর্থ দেওয়া, যাতে দ্বিতীয়বার জাকাতের জন্য তাকে হাত পাততে না হয়।
হজরত ওমর (রা) বলেছেন- যখন তোমরা অসহায়দের জাকাত দিবে তখন তাকে ধনী বানিয়ে দাও। ইমাম নববী (রা) বলেছেন- অসহায় গরিবদের এই পরিমাণ সম্পদ দান কর, যাতে তারা অভাবের গ্লানি থেকে মুক্তি পায় এবং ধনী ব্যক্তির পর্যায়ে এসে উপনীত হয়। স্বনির্ভর হওয়ার উপযুক্ত অর্থ প্রদানে অভিমত দিয়েছেন ইমাম শাফি ও অন্য ফেকাহবিদগণ [দারিদ্র্য বিমোচনে ইসলাম, ইফা]।
ইসলামের চেতনা আর বাংলাদেশের জাকাতের বণ্টনচিত্র পুরো উল্টো। দীর্ঘ বছর বিত্তবানরা জাকাত দিয়ে যাচ্ছেন। আজন্ম দরিদ্র পরিবার জাকাত-ফিতরা কুড়িয়েই যাচ্ছেন। তাদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন আসছে না। তা হলে বাংলাদেশের চলমান ধারার জাকাত দারিদ্র্য বিমোচন করছে নাকি প্রতিবছর বিত্তবানরা জাকাত বিলিয়ে দরিদ্রের লালন করছেন? বিবেকবান বিত্তশালীদের কাছে অনুরোধ- পরিকল্পিতভাবে ত্রুটিমুক্ত বণ্টনব্যবস্থার মাধ্যমে সঠিক তত্ত্বাবধান করে জাকাত প্রদান করুন। তা হলে জাকাতের প্রকৃত সুফল পাওয়া সম্ভব।
শিক্ষক : শেখ জনূরুদ্দিন রহ. দারুল কুরআন মাদরাসা, চৌধুরীপাড়া, ঢাকা।
Leave a Reply