আজ ১২ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ফটিকছড়ি উপজেলা প্রেসক্লাব আনন্দ ভ্রমণ

Spread the love

দীর্ঘ এক মাস ধরে সবার ক্লান্তিহীন অধীর অপেক্ষা। অবশেষে ঘনিয়ে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলা প্রেসক্লাবের বার্ষিক আনন্দ ভ্রমণ-২০২৫। দীর্ঘদিন ধরেই চলছিল এই উৎসব ঘিরে নানান প্রস্তুতি। একে একে সকলে একাকার হয়ে জড়িয়ে পড়েন প্রস্তুতির কাজে।

অবশেষে ২২ ফেব্রুয়ারি শনিবার সকাল সাড়ে দশটা। আলতো মেঘে ঢাকা আকাশে তখনো পুরো দুনিয়া রৌদ্রজ্জল। তপ্তরোধেই একে একে ক্লাবের সদস্যরা হাজির হতে থাকেন সদরের অস্থায়ী কার্যালয় সাংবাদিক শহীদের অফিসে। সেখান থেকেই যাত্রা শুরু রঙিন ব্যানারে সাজানো দশটি মোটরসাইকেল। উদ্দেশ্য চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান। পথেই সবাই সেজেছিল নানা রঙে, নানা ঢঙে। তিনটহরী এলাকায় ঐতিহ্যবাহী চাচার চা-দোকানে জিরিয়ে আড্ডায় মিলিত হই সবাই। সিঙ্গারা-চমুচা গালে মেখে দুপুর বারোটার দিকে অবশেষে সেই কাঙ্খিত গন্তব্যে পৌঁছি আমরা।

আকাঁবাঁকা মেঠোপথ বেয়ে পাহাড়ের চুড়ায় এক অসাধারণ বাংলো। টিনশেড়ের সুবিশাল বাংলোতে সবাই নিজেদের গুছিয়ে নিতেই শুরু হয় প্রাণবন্ত আড্ডা। একেকজনের অভিজ্ঞতা, পেশাগত জীবনের নানা চ্যালেঞ্জ, মজার ঘটনা সব মিলিয়ে দারুণ জমে ওঠে। শুধু সংবাদ নয়, ব্যক্তিগত গল্প, হাস্যরস, পারিবারিক অভিজ্ঞতা নিয়েও কথা হয় সবার।

ওবাইদুল আকবর রুবেল বলেন, ‘পাহাড়ি পথে মোটরযাত্রার বহর, গায়ে লাগা শীতল হাওয়া আর চারপাশের সবুজায়ন দৃশ্য যেন ভ্রমণকে উপভোগ্য করে তুলেছিল।’ সীরাত মঞ্জুর বলেন, ‘দীর্ঘ পথ পেরিয়ে নির্মল বাতাস আর সবুজে মোড়া প্রকৃতি যেন আগন্তুকদের অনাবিল স্বাগত জানাচ্ছিল। এ যেন সবার এক মিলিত প্রাণের দারুণ মেলবন্ধন।’

আয়োজনে নানান পর্বে উঠে আসে সংগঠনের শক্তিশালী কাঠামো গড়ার পরিকল্পনা। সদস্যদের পেশাগত দক্ষতা, সংগঠনের কার্যক্রম সুসংগঠিত এবং নতুনদের প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টির বিষয়গুলো গুরুত্ব পায়। শেষ পর্বে ছিল প্রাণবন্ত আলোচনা ও র‌্যাফেল ড্র। কার ভাগ্যে কী পুরস্কার আসবে, তা নিয়ে উত্তেজনা। একে একে বিজয়ীদের নাম আসে, প্রত্যেকে উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন। জয়-পরাজয়ের উর্ধ্বে ছিল পারস্পরিক আনন্দ ভাগাভাগি। কেবল পুরস্কারের জন্যই নয়, বরং উৎসবের রঙ আরও গাঢ় করেছিল।

সোলায়মান আকাশ বলেন, ‘সাংবাদিকতা কেবল পেশা নয়, একটি দায়িত্বও। আমরা চাই, সংগঠন শুধু সদস্যদের স্বার্থেই কাজ করবে না, বরং সমাজের কল্যাণেও ভূমিকা রাখবে।’
বিকেল গড়াতেই শুরু খোলা গানের জমজমাট আসর। সমবেত কন্ঠে-তালে গাইতে থাকেন একের পর এক পুরোনো জনপ্রিয় গান। প্রিয় গানের সুরে, মনের খোলা কথায় মুহূর্তগুলো হয়ে ওঠে আরও প্রাণবন্ত। নাছে-গানে অংশ নেন আবু মুছা, আব্দুস সাত্তার, মনছুর, সেলিম, কামরুল সবুজ, সাইফুদ্দিন, সাইফুল ইসলাম। তাদের নাছের ধরনই বলে দেয় তারা পেশাদার। সাংবাদিকতার পাশাপাশি তাদের দারুণ পারফরমেন্স।
এস এম আক্কাছ বলেন, ‘ফটিকছড়ি উপজেলা প্রেসক্লাব পুরোটাই একটি পরিবার। ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে সবাই লেখালেখি করেন। এজন্যই সবাই এতদূর এগোতে পেরেছি। সবাই এক সাথে খোলা মনে গাইতে পেরেছি।’
সালাহউদ্দিন জিকু বলেন, ‘আয়োজনটি সম্পর্ক দৃঢ়, পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং মানসিক প্রশান্তির এক অনন্য সুযোগ। শুধু বিনোদন নয়, এটি একে অপরকে আরও কাছ থেকে জানারও একটি উপলক্ষও।’
সন্ধ্যা গড়িয়ে যাওয়ার মুহুর্তে ব্রাক পরিচালিত বিশাল কৈয়াছড়া চা-বাগানের আকঁবাকাঁ পথে সেলফি তোলা আর সবার আনন্দের ভাগাভাগি হয়ে উঠেছিল অনবদ্য মুহুর্ত। এসব ক্যামেরাবন্দি করতে কেউই কিন্তু ভোলেননি। পরিশেষে ভুজপুর রাবারড্যাম এসে শেষ হয় আমাদের দিনভরের আনন্দযজ্ঞ। সেখানে চা-আড্ডা আর পরিকল্পনার পরিসমাপ্তি ঘটে। কিন্তু দিনশেষে সেখানেই যত্নে পড়ে আছে স্মৃতিকাতর অবুঝ মন।
আহমদ আলী চৌধুরী আয়োজনে জড়িত সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘সবার চেষ্টা ও আন্তরিকতায় আয়োজনটি দারুণভাবে করতে পেরেছি। আমরা এগিয়ে যেতে চাই সবার আগে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর