আজ ২৮শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৩ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ন্যায়বিচারের স্বার্থে ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারলে শিশু ধর্ষণের পরিমাণ কমবে না 

Spread the love

ইপসা’র আন্তর্জাতিক নারী দিবসের অনুষ্ঠানে বক্তারা

 

সাম্প্রতিক সময়ে সারা দেশব্যাপী ধর্ষণের মাত্রা যে পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে তা শুধু উদ্বেগজনক নয় বরং এটা নারী উন্নয়ন ও নারীর অগ্রযাত্রার পথে বড় ধরনের অন্তরায়। পূর্বের নারী ও শিশু ধর্ষণের যে ঘটনাগুলো ঘটেছে সেগুলোর সত্যিকারের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারলে বর্তমানে চলমান ধর্ষণের ঘটনাগুলো না ঘটার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকতো। কিন্তু অতীতের বিচারহীনতার কারণে বর্তমানে এই অপরাধের সংখ্যা বেশি হচ্ছে। ন্যায় বিচারের স্বার্থে ধর্ষণকারীর সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারলে শিশু ধর্ষণের পরিমাণ কমবে না বরঞ্চ দিন দিন বৃদ্ধি পাবে।

১২ মার্চ বুধবার দুপুর তিনটায় ইপসা’র কনফারেন্স হলে আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে ইপসা কর্তৃক আয়োজিত “নারী ও শিশু নির্যাতন মামলাসমূহের ন্যায়বিচারঃ প্রত্যাশা ও করণীয়” বিষয়ক আলোচনা সভায় বক্তারা উপরোক্ত মতামত ব্যক্ত করেন।

ইপসা’র প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ আরিফুর রহমানের সভাপতিত্বে উক্ত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এডভোকেট মো. মফিজুল হক ভূঁইয়া। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ও আইএসডিই বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এস. এম. নাজের হোসাইন। উক্ত আলোচনা সভায় ধারণা পত্র উপস্থাপন করেন ইপসা’র প্রোগ্রাম অফিসার সেতারা রুদ্র।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মহানগর পিপি এডভোকেট মো. মফিজুল হক ভূঁইয়া বলেন, সকল উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে একসাথে হয়ে একটি একটি বিষয় নিয়ে কাজ করতে হবে। একসাথে সব সংস্কার না করে পৃথক বিষয় নিয়ে কাজ করা শুরু করলে ধীরে ধীরে বদলাবে সবকিছু।

তিনি আরও বলেন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে। ধর্ষণ ও ধর্ষককে সামাজিকভাবে ঘৃণা করতে হবে। এখানে পারিবারিক ও সামাজিক শিক্ষা খুব বেশি জরুরী।

আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, ২০১৮ সালের চাঞ্চল্যকর শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল নেত্রকোনায় চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যা, একই বছর ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের দিন নোয়াখালীর সুবর্ণচরে স্বামী-সন্তানদের বেঁধে রেখে নারীকে ধর্ষণ, ২০১৯ সালে চট্টগ্রামের চান্দগাঁও আবাসিক এলাকায় গৃহকর্মী শিশু রাত্রীকে (১৪) গৃহে আটক রেখে ধর্ষণ এবং একই বছর হাটহাজারীর চাঞ্চল্যকর স্কুলছাত্রী তুহিনকে (১৩) ধর্ষণ করে খুন ও লাশ গুমের ঘটনাগুলো ঘটেছিল এবং যেগুলোর ন্যায়বিচার পাওয়ার আশায় এখনও ভুক্তভোগী ও সাধারণ জনগণ আন্দোলন করছে। এ মামলাগুলোর ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হলে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া আছিয়া (৮) ও নিলুফা (১১) লোমহর্ষক ধর্ষণসহ অন্যান্য ধর্ষণের ঘটনাগুলো আর ঘটতো না বলে অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকার কর্মীরা মনে করছেন।

ইপসা’র উপ পরিচালক মোহাম্মদ শহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় উক্ত সভায় ধারণা পত্রের উপর বক্তব্য রাখেন ব্রাইট বাংলাদেশ ফোরাম-বিবিএফের প্রধান নির্বাহী উৎপল বড়ুয়া, ব্র্যাকের বিডিসি এনামুল হাছান, স্বপ্নীল ব্রাইট ফাউন্ডেশন প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ আলী শিকদার, অপরাজেয় বাংলাদেশের চট্টগ্রামের প্রধান সমন্বয়কারী জিনাত আরা বেগম, সংশপ্তক’র লিটন চৌধুরী, ইপসা’র পরিচালক (কেএমফরডি) মোহাম্মদ শাহজাহান, পরিচালক (সমাজ উন্নয়ন) নাছিম বানু শ্যামলী এবং ইপসা’র সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আলী শাহীন, গণমাধ্যমকর্মী আফছার উদ্দিন লিটন এবং শিহাব জিসান প্রমূখ।

বক্তারা আরও বলেন, অত্যন্ত দুঃখজনক ও উদ্বেগজনক বাস্তবতা এই যে, প্রতিদিনই নারী ও শিশু ধর্ষন ও নির্যাতনের ঘটনা শিরোনামে আসে, গৃহকর্মী নির্যাতন, যৌন নিপীড়িন, ধর্ষন ও পাচারের মতো অপরাধগুলো এখনো সমাজে বিদ্যমান। নির্যাতিতদের আইনের মাধ্যমে ন্যায় বিচারের পেতে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি সচেতন, মানবিক, সহানুভূতিসম্পন্ন এবং আইনি হতে হবে। বিচারব্যবস্থায় নারী শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা, দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া গ্রহন করাসহ ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য মিডিয়া, বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, উন্নয়ন কর্মী ও মানবাধিকার কর্মীসহ সকল স্তরের সমাজের মানুষকে এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে। ধর্ষক যাতে শিশুর বা গৃহকর্মী শিশুর দারিদ্র্যতার সুযোগ নিয়ে সমঝোতার মাধ্যমে আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসতে না পারে সে বিষয়ে সবাইকে সজাগ ও সচেতন থাকার আহবান জানানো হয়। সভায় অংশগ্রহনকারী সবাই ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ধর্ষনমূক্ত বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যার যার অবস্থান থেকে অবদান রাখার বিষয়ে ঐক্যমত পোষন করেন। সভায় নারী ও শিশু ধর্ষনের প্রতিটি ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যাক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া এবং নারী ও শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করাসহ ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার জন্য দাবী জানানো হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর