নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে গেল এক যুগে এক কোটি ১১ লাখ মানুষ নতুন করদাতা হয়েছেন, তবে তাদের ৭০ শতাংশ আয়কর রিটার্ন দেন না বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুর রহমান খান। গতকাল বুধবার রাতে নগরীর জিইসি কনভেনশন সেন্টারে এক অনুষ্ঠানে এই তথ্য জানান তিনি। বার্ষিক ভোজ উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে চট্টগ্রাম কর আইনজীবী সমিতি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, আগে আয়কর দাতার সংখ্যা ২১-২২ লাখ ছিল। গত ১০-১২ বছরে এক কোটি ১১ লাখ নতুন আয়কর দাতা নিবন্ধন হয়েছে। কিন্তু তাদের ৭০ শতাংশ আয়কর রিটার্ন দেন না। এর কারণ হল কর আইনজীবীরা তাদের ক্লাইন্টদের আয়কর না দিলে কী সমস্য হবে সেটা বুঝিয়ে বলেন না। আবার এনবিআরের যে পরিদর্শকরা আছেন তারা করদাতাদের বাড়ি ভিজিট করেন না, তদারকি করেন না। ব্যাংক একাউন্টে আরকর দাতাদের টাকা-পয়সা কেমন আছে সেটা দেখেন না।
পর্যাপ্ত আয়কর আদায় না হওয়ায় বাংলাদেশ একটি ঋণগ্রসস্থ দেশে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা একটি ঋণগ্রস্থ জাতিতে পরিণত হয়েছি। কারণ প্রতিবছর আমাদের যে রাজস্ব আয় হয়, তার চেয়ে ব্যয়ের পরিমাণ অনেক বেশি। আমাদের অভ্যন্তরীণ ঋণও বেড়ে যাচ্ছে। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ঋণের এই ঘানি টানতে হবে। তাই ঋণ কমাতে আমাদের অবশ্যই রাজস্ব আহরণের পরিমাণ বাড়াতে হবে। পৃথিবীতে খুব কম দেশ আছে যাদের রাজস্ব-জিডিপি’র অনুপাতটা একটু কম। আমাদের জিডিপির মাত্র ৭ দশমিক ১ শতাংশ রাজস্ব আয় থেকে পাই। আমাদের ১৯৭২ সালে যে বাজেট ছিল, তার ৯০ শতাংশ রাজস্বই ঘাটতি ছিল। এখনও আমরা সেখান থেকে বের হতে পারিনি।
আইকর আদায়ের পরিমাণ একটি দেশের সভ্যতার মাপকাঠি জানিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, একটা দেশের রাজস্ব আয়ের কত শতাংশ আইকর থেকে আসে সেটা ওই দেশ কতটা সভ্য তার একটি মাপকাঠি নির্দেশ করে। সে অনুযায়ী আমরা এখনও সভ্য জাতি থেকে বহু দূরে। কিন্তু গরিব মানুষের কাছ থেকে কর আদায় করা সহজ বলে আমরা তাদের কাছ থেকে কর আদায় করি। কারণ একজন গরিব মানুষ ঘাম মুছার জন্য একটি গামছা কিনলে কত টাকা টেক্স যায় তিনি জানেন না। তাই আয়কর আদায়ের হিস্যা বৃদ্ধি করতে হবে।
আইন সংশোধনের কথা জানিয়ে আবদুর রহমান খান বলেন, অনেকক্ষেত্রে আমাদের আয়কর আইন, মূসক আইন, শুল্ক আইনের অপব্যবহার ঘটে। আবার এগুলো সময়োপযোগী না। এই তিনটা আইন ব্যপকভাবে সংস্কার করতে হবে। আমাদের যে পরিমাণ আয়কর আদায় হয়, এর সমপরিমাণ লোকসান হয়। ট্যাক্স এডমিনিস্ট্রিশন ও টেক্স পলিসি পৃথক লিডারশিপে নিতে হবে।
চট্টগ্রাম কর আইনজীবী সমিতির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব মোহাম্মদ আবু তাহের। এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ ট্যাক্স লইয়ার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি এডভোকেট রমিজউদ্দিন আহমেদ, চট্টগ্রাম কর আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব মোহাম্মদ মুছা, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য এডভোকেট এ.এস.এম. বদরুল আনোয়ার,
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট মোহাম্মদ নাজিমউদ্দীন, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আশরাফ উদ্দীন চৌধুরী রাজ্জাক, আয়কর এপ্যালেট ট্রাইব্যুনালের সদস্য মোহাম্মদ শাহীন আক্তার হোসেন, কর অঞ্চল-১’র কর কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, কর অঞ্চল-২’র কর কমিশনার মোহাম্মদ আব্দুস সোবহান, কর কমিশনার (আপীল) শামিনা ইসলাম, কর অঞ্চল-৪’র কমিশনার আয়েশা সিদ্দিকা শেলী, কর অঞ্চল-৩’র কমিশনার মোহাম্মদ মঞ্জুর আলম প্রমুখ।