মুহাম্মদ আবদুর রহীম চৌধুরী
বাংলাদেশ ঐক্য পার্টি (বিওপি) একটি সাময়িক রাজনৈতিক দল। দেশে শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ চলমান থাকলে বিওপি সৃষ্টির প্রয়োজন হতো না। ৫ আগস্ট শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতন এবং ড. ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্র্বতী সরকার গঠিত হওয়ায় দেশে শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে দেশ কাঙ্খিত লক্ষ্যে তথা প্রথম বিশ্বে পৌঁছার ক্ষেত্রে সঠিকভাবে এগিয়ে যাবে এরকম প্রত্যাশা আমরা দেশবাসী করেছি। ড. ইউনুস সরকার প্রত্যাশা অনুযায়ী না আগালেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে সফল হচ্ছে। কিন্তু আমরা ড. ইউনুস থেকে মালয়েশিয়ার মাহাথির মোহাম্মদ কিংবা সিঙ্গাপুরের লি কুয়ান ইউ এর মতো সফলতা প্রত্যাশা করি। তিনি তাদের থেকে যোগ্যতায় কোনো অংশে কম বলে আমরা মনে করি না। মানুষ তার কাজের মাধ্যমে যোগ্যতার প্রমাণ দেয়। কিন্তু বিগত কয়েক মাসে তাঁর কাজের ধরণ দেখে আমরা তেমন ভরসা করতে পারছি না। এমনটি হওয়ার কথা নয়। তাঁকে ব্যর্থ করার জন্য তাঁর উপদেষ্টাদের কেউ কেউ ষড়যন্ত্র করছে না তো? সরিষা খেতে ভূত থাকলে সেটা আগে তাড়াতে হবে। তিনি নিজে ও তাঁর পারিষদ বর্গকে শতভাগ সৎ ও কৌশলী হতে হবে। সব ধরনের একটিভ ও প্যাসিভ দুর্নীতি হতে মুক্ত থাকতে হবে।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ড. ইউনুস সরকার ব্যর্থ হওয়া মানে শেখ হাসিনার আমলে দেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে যে আশংকা সদা বিরাজমান ছিলো, সেটা বাস্তবে রুপ নিয়ে দেশের সর্বনাশ হয়ে যাওয়া। আর তাই দেশকে সর্বনাশ হওয়া থেকে বাঁচাতে ড. ইউনুসকে দেশী-বিদেশী সব ষড়যন্ত্রকে কৌশলে দমন/হ্যান্ডেল করে দেশকে পরম মমতায় আগলে রেখে এগিয়ে নিতে হবে। ড. ইউনুস এর বিকল্প আপাতত কেউ নেই আর তাই ড. ইউনুস এর ব্যর্থ হওয়া চলবে না। আমরা দেশপ্রেমিক -শিক্ষার্থী জনতা ড. ইউনুসকে ব্যর্থ হতে দিতে পারি না। ড. ইউনুসকে ব্যর্থ করে দিতে যারা চক্রান্ত করছে তারা পূর্বের আওয়ামী জোটের কিংবা বিএনপি জোটের কিংবা প্রশাসনের কিংবা শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে, সে যেই হোক না কেনো শক্ত হাতে দমন করতে হবে। জিরো টলারেন্স এর কোনো বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে কোনো ধরণের শৈতিল্যতা প্রদর্শন করা মানে দেশপ্রেমের অভাব। যাদের দেশপ্রেমের অভাব তাদের রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার নেই।
এরপর ড. ইউনুস সরকারকে যেটা করতে হবে সেটা জাতীয় ঐক্য। জাতীয় ঐক্য না হলে দেশ আগাবে না। জাতীয় ঐক্য সৃষ্টিতে যুগের পর যুগ ইন্ডিয়াও বাধার কারণ হয়ে আসছে। ইন্ডিয়া হয়তো ভয়ের কারণে এরকম করছে। জাতীয় ঐক্যের জন্য দেশীয় ও আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে নিম্নোক্ত বক্তব্য উপস্থাপন করছি।
প্রত্যেক কিছুর মূলই আসল। যিনি যে ধর্ম কিংবা মতাদর্শকে সঠিক মনে করে আন্তরিক অনুসরণ করেন, মূল নিয়ে পড়ে থাকেন, তাকে সে পথ থেকে, মূল থেকে জোরপূর্বক সরানোর ব্যবস্থা করা হলে চরমপন্থা সৃষ্টি হয়। তারা মূল নিয়ে থাকুক, আপত্তি করা উচিত নয় তবে মূল নিয়ে থাকতে গিয়ে অন্য ধর্মের কিংবা মতাদর্শের লোকদের কোনো ক্ষতি করতে দেওয়া যাবে না। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে ভারত ও বাংলাদেশে বিভিন্ন ধর্মের কিংবা/মতাদর্শের কিছু কিছু লোক অন্য ধর্মের/মতাদর্শের লোকের ক্ষতি করার প্রবণতা লক্ষণীয়। এক্ষেত্রে ভারত সবচেয়ে এগিয়ে আর বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। বাংলাদেশে খুবই কম যা চলছে-তাও কাম্য নয়। তা জিরো পর্যায়ে এনে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষমূলক কথা কিংবা মন্তব্যও যাতে কেউ করতে না পারে -তার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সরকারের কাছে আহবান জানাচ্ছি।
মূল/মতাদর্শ নিয়ে দেশে ইসলামি, সেকুলার কিংবা সংস্কারপন্থী কিছু লোক ইন্ডিয়াকে থ্রেট মনে করে কিছু কাজ ও বক্তব্য অব্যাহত রাখার প্রেক্ষিতে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়ে উভয় দেশ নরককুণ্ডে পরিণত হবে। এরমধ্যে ইন্ডিয়ায় চলমান সংখ্যালঘু নির্যাতন মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গিয়ে সেখানে নাভিশ্বাস শুরু হবে। বাংলাদেশকে থ্রেট দেওয়া অব্যাহত রাখবে ইন্ডিয়া। বাংলাদেশ তা মোকাবিলায় পাকিস্তান ও চীনের দিকে ঝুঁকে যাবে শুধু প্রতিরোধের জন্য। দেশের উন্নয়নের স্বার্থে অবশ্যই উক্ত দুই দেশের দিকে ঝুঁকা উচিত কিন্তু বাধ্য হয়ে ঝুঁকাটা (ভারত ও বাংলাদেশ) উভয় দেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনবে। দেশ কুরুক্ষেত্রে পরিণত হয়ে যাবে। তখন ইসরায়েলসহ বিভিন্ন দেশ সুযোগ নিবে। বাংলাদেশের বিভিন্ন দল/গোষ্ঠী তিপ্পান্ন বছর অপেক্ষা/চেষ্টা করেও তাদের মূল রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। অখন্ড ভারত, ইসলামি রাষ্ট্র কিংবা সেভেন সিস্টার্স ভেঙে দেওয়া। কিন্তু এই সময়ে ঠিকই দেশের ক্ষতি হয়ে দেশ প্রথম বিশ্বে পরিণত হওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। অথচ মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর আমাদের পরে স্বাধীন হয়ে অনেক এগিয়ে গেছে। ভারত ও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যারা সংঘাতপূর্ণ ও অন্যকে ঠকানোর চিন্তা ও কাজ করে আসছে-তার প্রেক্ষিতে ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশ বেশ আর কম ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
ভারত বাংলাদেশ থেকে রেমিট্যান্সসহ বিভিন্ন সুবিধা পেয়ে লাভবান হয়েছে মনে করলেও আসলে তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাংলাদেশ নিয়ে কূটবুদ্ধির ফরেইন পলিসি পরিবর্তন করে উভয় দেশের জন্য মর্যাদাপূর্ণ পলিসি গ্রহণ করে ইন্ডিয়া তাদের দেশের অভ্যন্তরে 'জাস্টিস ফর অল' কায়েম করে মসজিদের নিচে মন্দির না খোঁজে তাদের যে সম্ভাবনা আছে, সে-সবের পেছনে নজর দিলে ভারতও এতো দিনে প্রথম বিশ্বে পৌঁছে যেতো।
উভয় দেশে অবিশ্বাস ও ভয় কাজ করছে। এই ভয় কাটিয়ে উঠে একে অন্যকে বিশ্বাসের আওতায় আনতে পারলে উভয় দেশ বেঁচে যাওয়ার পাশাপাশি মানবতা বেঁচে যাবে। প্রত্যেক দেশে তাদের স্ব স্ব মৌলবাদী কার্যক্রম অন্য ধর্মের ক্ষতি না করে চলমান থাকুক। আমাদের আপত্তি নেই। তবে চলমান অবিশ্বাস দূরীকরণ ও আস্থা অর্জনে আগামী পাঁচ বছর বাংলাদেশ ঐক্য পার্টি বাংলাদেশের ক্ষমতায় থাকলে বিগত চার বছর ধরে দেওয়া বক্তব্যের আলোকে বাংলাদেশকে ঐক্য, সাম্প্রদায়িক শতভাগ সম্প্রীতি, উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করলে তাতে ভারতও অনুপ্রাণিত হয়ে উভয় দেশই এগিয়ে যাবে। ভারতেও কোনো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা থাকবে না। বাংলাদেশ যখন সঠিক ট্র্যাকে উঠে যাবে এরপর পরবর্তী ইলেকশনে বাংলাদেশ ঐক্য পার্টি আর না দাঁড়িয়ে দেশের অন্যান্য দল জনগণের সমর্থন নিয়ে যাতে ক্ষমতায় আসতে পারে তারজন্য ফিল্ড ছেড়ে দিবে। বাংলাদেশ ঐক্য পার্টির চিন্তাধারা বাংলাদেশ ঐক্য পার্টির নেতৃত্বে কিংবা একই মানসিকতার অন্য কারো নেতৃত্বে দেশে বাস্তবায়ন হোক-তা আমরা চাই।
সর্বজনীন ও শান্তিপূর্ণ ফর্মূলা যা বাংলাদেশ ঐক্য পার্টি গ্রহণ করেছে-সেরকম ফর্মূলা আর কেউ গ্রহণ না করায় দেশের বৃহত্তর স্বার্থে সাময়িক রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ ঐক্য পার্টিকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার জন্য দেশবাসীকে উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।
লেখক: মুহাম্মদ আবদুর রহীম চৌধুরী
দেশীয় ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংকট শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রবক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা, বাংলাদেশ ঐক্য পার্টি।