আজ ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মানবীয় ও অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব বীর গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা ফজল আহমদ

Spread the love

রফিকুল ইসলাম

মহৎ, মানবীয় ও দয়ালু ব্যক্তিত্ব বীর গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব ফজল আহমদ সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ পটিয়া উপজেলার ধলঘাট ইউনিয়নের তেকোটা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের কৃতি ও আলোকিত সন্তান। ১৯৫৫ সালের ১৯ মে সোমবার পাখিডাকা ভোরে মায়ের কোল আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ৫ ভাই ৪ বোনের মধ্যে তৃতীয়। তাঁর পিতা মনোহর আলী ছিলেন একজন কৃষক, মাতা ছবুরা খাতুন ছিলেন একজন গৃহিনী। ১৯৬৮ সালের ১ আশ্বিন তাঁর পিতা মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৮৫ সালের ১৭ জানুয়ারী, ২০ মাঘ তাঁর মাতা মৃত্যুবরণ করেন।

বীর গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা ফজল আহমদ স্থানীয় ছায়া সুশীতল গৈড়লা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং গৈড়লা কে.পি, উচ্চ বিদ্যালয় হতে মেট্রিক পাশ করেন। ১৯৭২ সালে পটিয়া কলেজ উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হন ‘৭৪ সালে এইচ.এস.সি. পাশ করেন। এইচ.এস.সি. পাশের পর পটিয়া কলেজেই ডিগ্রীতে ভর্তি হন। ১৯৭৭ সালে ডিগ্রী পাশ করেন। ১৯৭৮ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এম.এ (রাষ্ট্র বিজ্ঞানে) ভর্তি হন। ১৯৮০ সালে এম.এ পাশ করেন। এম.এ পাশ করেই তিনি চট্টগ্রাম আইন কলেজে ভর্তি হন এবং আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেন। আইন কলেজে পড়াশোনা শেষ করেই অন্য কোন পেশায় না গিয়ে তিনি চাকুরী করার সিদ্ধান্ত নেন। পড়াশোনা শেষ করে তিনি প্রথমে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চাকুরী গ্রহণ করেন। দুই বছর দায়িত্ব পালনের পর চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে চাকুরী গ্রহণ করেন। সেখানে ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চাকুরী করার পর কাস্টমসের চাকুরী ছেড়ে দিয়ে ১৯৮৩ সালেই বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগদান করেন। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক এর যুগ্ম-পরিচালক পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি কর্মক্ষেত্রে সততা, দক্ষতা ও ন্যায়-নীতির মাধ্যমে দায়িত্ব পলন করে সর্বজনগ্রহণযোগ্যতা অর্জন করে সম্মানিত হয়েছেন।

১৯৮৭ সালে ৬ মার্চ শুক্রবার বোয়ালখালীর ঘোষখীল গ্রামের সম্ভ্রান্ত পরিবারের বাংলাদেশ ডাক বিভাগের কর্মকর্তা আবদুল লতিফ এর ১ম কন্যা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত জেসমিন আরা বেগমকে বিবাহ করেন। জেসমিন আরা বেগম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হতে ইসলামের ইতিহাস বিষয়ে এম.এস পাশ করেন এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে সহকারী জেনারেল ম্যানেজার পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

বীর গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা ফজল আহমদ ৪ (চার) কন্যা সন্তানের জনক। তাঁর কন্যাগণ উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশ ও বিদেশে চাকুরী করে মেধা ও দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। ১ম সন্তান প্রকৌশলী সাবরিনা বিনতে আহমদ সাকী একজন আই.টি বিশেষজ্ঞ। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি প্রতিষ্ঠানে আইটি বিশেষজ্ঞ হিসেবে চাকুরীতে আছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ভার্জিনিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়াশোনা করেন। ২য় সন্তান ডাক্তার সায়মুনা জেসমিন পিংকি, এম.বিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য), চট্টগ্রাম পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ কর্মরত আছেন। ৩য় সন্তান প্রকৌশলী ইফফাত বিনতে ফজল (ইমু) আমেরিকান মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটি হতে কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং-এ (এম.এস) ১ম শ্রেণিতে ১ম হয়েছেন এবং বর্তমানে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত আছেন। ৪র্থ সন্তান ফারিয়া জেসমিন প্রিমা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজম্যান্টে অনার্স করছেন।

বীর গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা ফজল আহমদ স্কুল জীবন থেকেই ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত হন। তিনি ১৯৬৭ সাল হতে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী ছিলেন। ১৯৭০ সালে গোপন কমিউনিস্ট পার্টির সাথে যুক্ত হয়ে মেম্বারশীপ পান এবং সমাজতন্ত্রের মূল মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে সক্রিয়ভাবে পার্টির কাজে অংশগ্রহণ করেন। তিনি পটিয়া থানা ছাত্র ইউনিয়নের নেতা ছিলেন। ‘৭৫ পরবর্তী সময়ে ছাত্র ইউনিয়ন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সংসদের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে চাকুরী জীবন শেষে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, প্রাতিষ্ঠানিক কমান্ড চট্টগ্রামের কমান্ডার হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। একই সাথে তিনি ‘মুক্তিযুদ্ধকালিন ন্যাপ- কমিউনিস্ট পার্টি ছাত্র ইউনিয়ন’ বিশেষ গেরিলা বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদ চট্টগ্রামের সদস্য সচিব এবং বঙ্গবন্ধু সমাজ কল্যান পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি চট্টগ্রাম প্রাতিষ্ঠানিক বীর মুক্তিযোদ্ধা সমবায় সমিতি লি: চট্টগ্রামের সভাপতিসহ আরো অনেক সংগঠনের নেতৃত্বে আছেন।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি অনেকগুলো সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মানবিক সংগঠনকে পৃষ্ঠপোষকতা করে মানব কল্যাণে অগ্রণি ভূমিকা রেখে চলেছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জাতীয় বীর হিসেবে স্বীকৃতি দান ও দেশব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিফলক স্থাপনের জন্য সরকারের কাছে জোরালো দাবি জানিয়ে আসছেন তিনি। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় ও তাঁর লিখা প্রবন্ধে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে উন্নয়নমূলক কাজগুলির প্রতিবেদন প্রচার ও প্রকাশ করে সরকারের উন্নয়নের ধারাকে উৎসাহিত করে চলেছেন। অবসর জীবনে লেখা- লেখি, সমাজসেবা-মানবসেবায় এবং সাধারণ মানুষের কল্যাণে নিবেদিত বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব ফজল আহমেদ একজন সফল ও অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব।

লেখক: সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর