অনলাইন ডেস্ক
ঋণ, বিশৃঙ্খলাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে স্বনির্ভর করবেন জানিয়ে মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, আমি এসি রুমে বসে থাকার লোক নই। আমি অত্যন্ত দ্রুত সময়ের মধ্যে চট্টগ্রামের ৪১ ওয়ার্ডে প্রোগ্রাম দেব। আমাদের এখন প্রধান যে সমস্যা সেটা হচ্ছে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে হবে। এ জন্য গণসচেতনতা বাড়াতে হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযানের পাশাপাশি সব নাগরিককে সচেতন করার লক্ষ্যে লিফলেট বিতরণ কর্মসূচিসহ মশা নিধন করা হবে। লার্ভিসাইড কিলিং করার যে স্প্রে করা হয়, আমি যখন এসেছি এই লার্ভিসাইডের কোয়ালিটি একটু টেস্ট করতে চাই। এমন কোনো স্প্রে আমি চাই না যে স্প্রে দিয়ে মশা লাফ দিয়ে উঠে যাবে এবং মশা মরছে কিনা সেটা দেখতে হবে। মশা না মরলে এই ধরনের ওষুধ কিন্তু আমি গ্রহণ করব না।
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) লালদীঘির পাড়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
মেয়র বলেন, চট্টগ্রাম বাঁচলেই বাংলাদেশ বাঁচবে। এই চট্টগ্রাম শুধু আমার একার নয়; এই চট্টগ্রাম আমাদের সবার। এই স্লোগান দিয়ে আমি আমার কার্যক্রম শুরু করব। আমাদের চট্টগ্রামের প্রতি মমত্ববোধ ভালোবাসা থাকতে হবে। তখনই আমরা নতুন প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য সুন্দর পরিচ্ছন্ন গ্রিন সিটি, ক্লিন সিটি, হেলদি সিটি উপহার দিতে পারব। যেটি আমার নির্বাচনী ইশতেহারে আপনারা দেখেছেন।
তিনি বলেন, আমাদের কাজের প্রতি সিনসিয়ারিটি এবং কাজের প্রতি সৎ থাকতে হবে। তাই আজকে আমি পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযানের ওপর জোর দিতে চাই। প্রথমে একটা ক্লিন সিটিতে রূপান্তর করতে চাই। আমি বলতে চাই যে দোকান ও প্রতিষ্ঠানের সামনে ময়লা আবর্জনা পাওয়া যাবে তাদের ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করা হবে।
মেয়র বলেন, প্রথমে আমি নিজেকে দিয়ে সংস্কার করতে হবে। আমি নিজের আত্মশুদ্ধি দিয়ে আমাকে শুরু করতে হবে। তাহলে দেখবেন সবকিছু পরিবর্তন হয়ে যাবে। আমরা করতে পারি আমরা জানি আমরা আসলে বাঙালিরা কর্মঠ আমরা কাজ করতে জানি। আসলে হয়েছি কি আমরা একটা সিস্টেমের মধ্যে পড়ে গেছি। যার কারণে আমরা আজকে সেটা করতে পারছি না। আমি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় প্রতিষ্ঠা করবো। ইতিমধ্যেই সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয় করার জন্য গত ১৫-২০ দিন ঢাকাতে অবস্থান করেছি। আমি বেশ কয়েকটি টকশো করেছি এবং এসব মন্ত্রণালয়ের যারা উপদেষ্টা আছে তাদের কথা বলেছি যে এটার জন্য যে জিনিসটি খুবই দরকার সেটা হচ্ছে যে সিটি গভর্মেন্ট বা নগর সরকার। যদি সিস্টেমের মধ্যে দিয়ে নগর সরকার হয় তাহলে সব সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় প্রতিষ্ঠিত হবে।
হোল্ডিং ট্যাক্স যদি আমরা ঠিকমত পাই ইনশাআল্লাহ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে বেতন দেওয়ার জন্য আর কোনো সমস্যা হবে না কিন্তু ওই হোল্ডিং ট্যাক্সও আমরা কিন্তু পাচ্ছি না। বিভিন্ন কারণে অনেকেই হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়িয়েছে। নাগরিকরা আপিল করতে করতে সমাধান না পেয়ে অনেকেই ৩০-৪০ শতাংশ কর দিচ্ছেন। মাঝখানে একটা গ্রুপ সেখানে গিয়ে কিছু টাকা নিয়ে কমিয়ে দেওয়ার কথা বলে এদিক ওদিক করে টাকা কামিয়ে নিয়েছেন। সিটি করপোরেশনকে আপনারা অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়াত্বের দিকে নিয়ে যাবেন না। এ বিষয়টার সমাধান করতে হবে।
মেয়রের সাথে দিনব্যাপী কার্যক্রমে ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, সচিব মো. আশরাফুল আমিন, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজমি, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবুল কাশেম, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম, প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির চৌধুরী, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. ইমাম হোসেন রানা প্রমুখ।
দুপুরে মেয়র হজরত শাহ্ আমানত (র.) মাজার জেয়ারত করেন এবং গরিব-দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করেন। বিকেলে লালদীঘি পাড়ে চসিক লাইব্রেরি ভবনের সম্মেলন কক্ষে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে মতবিনিময় করেন। সন্ধ্যায় টাইগারপাসস্থ নগর ভবনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে যোগ দেন। এরপর তিনি মেয়রের চেয়ারে বসে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন।