অনলাইন ডেস্ক
১৯৭১ সালে তরতাজা যুবক পটিয়ার রফিক আহমেদ মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণের ৫৩ বছর পরেও বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি তিনি। গত ২৫ অক্টোবর তিনি আক্ষেপ করে এ প্রতিবেদককে বলেন, মরণের আগে বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাবো কিনা কে জানে? বিভিন্ন রোগশোকে আক্রান্ত রফিক আহমেদের বয়স ৮০'র কোটায়। প্রায় সময়ই তিনি শয্যাশায়ী থাকেন। বীরমুক্তিযোদ্ধা পটিয়ার কৃতী সন্তান রফিক আহমেদ। মুক্তিযোদ্ধা রফিক জানান, মহান মুক্তিযুদ্ধের পর দীর্ঘদিন তিনি প্রবাসে ছিলেন। এ ছাড়া পারিবারিক ও পারিপার্শ্বিক নানা কারণে তিনি যথাসময়ে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ে কোন আবেদন করতে পারেননি। তিনি জানান, ৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখ সমরে অংশগ্রহণ করে দেশ স্বাধীন করেছেন এটাই ছিল তার কাছে বড় পাওয়া। মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতির জন্য আবেদন না করার এটিই ছিল আরো একটি বড় কারণ।
রফিক আহমেদ চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার কোলাগাঁও ইউনিয়নের নলন্দা গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে বোয়ালখালীর স্যার আশুতোষ কলেজের গণিত বিভাগের অধ্যাপক দিলীপ কুমার চৌধুরীর সাথে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এপ্রিলের দিকে তিনি ওই স্যারের সাথে বান্দরবান পার্বত্য জেলা থেকে পাহাড়ি পথ বেয়ে কাপ্তাই পদুয়া হয়ে দোভাষী বাজারে উপস্থিত হন। এ সময় অধ্যাপক দিলীপ কুমারের জিপটি ছিল সবার আগে। তিনি রওনা হয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে, ইমাম গাজ্জালি কলেজ পার হবার পরই তারা গুলির আওয়াজ শুনতে পান। এ হামলায় অধ্যাপক দিলীপ কুমার চৌধুরীসহ অনেকেই সেদিন শহীদ হন। তখন তারা যে ক'জন বেঁচে ছিলেন সবাই চট্টগ্রাম শহরে চলে আসেন।
তিনি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে আরো বলেন, পটিয়ার পূর্বপাহাড়ে খুরুশিয়ার বাঘাইয়া চাকমার খামার বাড়িতে লাঠি আলম, হাবিলদার ইছহাকের অধীনে অস্ত্র চালনা ও গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন তিনি। পরবর্তীতে অন্যদের সাথে ভারতের মিজোরামের দেমাগ্রী ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নেন।
মুক্তিযোদ্ধা রফিক দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৫ সাল থেকে দীর্ঘ ৩২-৩৩ বছর জীবিকার তাগিদে বিদেশে ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় যুক্ত হওয়ার জন্য গত বছরের ২০২২ সালের ১৯ জানুয়ারি তিনি আবেদন করেন। যার নম্বর ৭০৮১৬৪০০৫২০৩২৫। এ ছাড়া একই বছর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ২৪ এপ্রিল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি আবেদন করেছিলেন। পরে তিনি ২০২৩ সালেও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবর আরেকটি আবেদন করেছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে তার অবিস্মরণীয় অবদান থাকা সত্ত্বেও স্বীকৃতি মেলেনি আজও। বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা রফিক আহমেদ খুবই অসুস্থ। তার মস্তিস্কের এক পাশে রক ধরা পড়েছে। তার একমাত্র ছেলে মোজাম্মেল হক এরশাদ বলেন, আমার বাবা একজন বীরমুক্তিযোদ্ধা। জীবিত অবস্থায় তিনি যেন এর স্বীকৃতি পান। এজন্য তিনি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছেন। বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে তার বাবার স্বীকৃতি পাওয়ার আবেদনপত্রটি পড়ে আছে।