অনলাইন ডেস্ক
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৮তম জন্মদিন আজ। এরমধ্য দিয়ে ৭৮ বছরে পা দিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে বর্তমানে তিনি ভারতে আশ্রিত অবস্থায় আছেন।
তিনি ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের মধুমতি নদী বিধৌত টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছার জ্যেষ্ঠ সন্তান এবং আওয়ামী লীগের সভাপতি তিনি।
১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে একদল বিপদগামী সেনাবাহিনী সদস্য দ্বারা নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৮১ সাল থেকে দেশের অন্যতম প্রাচীন দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে হাল ধরেন। ৭৮ বছরের জীবনে অনেক সংকট, চড়াই-উতরাই পেরিয়েছেন তিনি। দেখেছেন সাফল্যের চূড়া। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন ও লম্বা সময় দেশ পরিচালনার অভিজ্ঞতা তার। টানা চার মেয়াদে আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসাবে সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনা করেন। কিন্তু গত ৫ আগস্ট কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে আবারও ভারতে আশ্রিত হয়ে আছেন। বর্তমানে অন্তবর্তীকালীন সরকার দেশ পরিচালনা করছেন।
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার শৈশব কেটেছে চিরায়ত গ্রামীণ পরিবেশে, দাদা-দাদির কোলেপিঠে। ১৯৫৪-এর নির্বাচনের পর শেখ হাসিনা বাবা-মায়ের সঙ্গে ঢাকায় চলে আসেন। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে ছাত্রজীবন থেকে প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন তিনি। সংগ্রামী জীবনে তাকে ১৯ বার হত্যার চেষ্টা করা হয়। ১০ বার তাকে জেল-গৃহবন্দি থাকতে হয়েছে। মৃত্যু ভয়কে পরোয়া না করে তিনি ক্লান্তিহীন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন দেশমাতৃকার জন্য। তার নেতৃত্বে অসংখ্য কালোত্তীর্ণ সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ।
শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের বড় সন্তান। তিনি ঢাকার আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৫ সালে মাধ্যমিক, ১৯৬৭ সালে ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা কলেজ) থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেন। ওই বছরেই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্সে ভর্তি হন এবং ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
শেখ হাসিনা ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজে পড়ার সময় ছাত্র সংসদের সহসভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সদস্য এবং রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
ছাত্রলীগের নেত্রী হিসেবে তিনি আইয়ুববিরোধী আন্দোলন এবং ৬ দফা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন।১৯৬৮ সালে পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনার বিয়ে হয়। ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার আগে ছোট বোন শেখ রেহানাসহ শেখ হাসিনা ইউরোপ যান। তিনি সেখানে অবস্থানকালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু নিহত হন। তাৎক্ষণিকভাবে দেশে ফেরার পরিস্থিতি না থাকায় তিনি ইউরোপ ছেড়ে স্বামী-সন্তানসহ ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। ১৯৮১ সালের ১৩ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে তাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ওই বছরেরই ১৭ মে ছয় বছরের প্রবাস জীবনের অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসেন তিনি।
রাজনীতি শেখ হাসিনার জন্য নতুন কিছু নয়, জন্মসূত্রে পাওয়া এক উত্তরাধিকার। শৈশব থেকেই তার পিতা বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক-সংগ্রামী জীবন দেখেছেন তিনি। ছাত্র-জীবনে ছিলেন ছাত্রলীগের কর্মী, কলেজ ছাত্র সংসদের সহসভানেত্রীও নির্বাচিত হয়েছেন। এই ৭৬ বছরের অর্ধেকেরও বেশি সময় ধরে তিনি নৌকা প্রতীকের হাল ধরে আছেন। সঙ্গে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের। টানা চার মেয়াদসহ তিনি ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
এবার বিশেষ পরিস্থিতিতে তার জন্মদিন পালন করবে দলের নেতাকর্মীসহ সমর্থক ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা। বুধবার দলের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে ২৮ সেপ্টেম্বর জননেত্রী শেখ হাসিনার ৭৮তম জন্মদিন যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী-সমর্থক এবং দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আওয়ামী লীগ।
এতে বলা হয়েছে, আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর,২০২৪ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা, বাংলাদেশের সফল প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংগ্রামী সভাপতি, দেশের গরীব- দুঃখী-মেহনতি মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল জননেত্রী শেখ হাসিনার ৭৮তম জন্মদিন যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী-সমর্থক এবং দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানানো হচ্ছে।
এ উপলক্ষে দেশের সকল মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, গির্জায় তার দীর্ঘায়ু এবং সুস্বাস্থ্য কামনা এবং দেশবাসীর জীবনে চলমান দুর্যোগ থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে দোয়া, মোনাজাত ও প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।