অনলাইন ডেস্ক: 'আব্বু থাকলে হৈ-হুল্লোড়ে মেতে থাকতেন। আজ তিনি নেই, তাই সব শান্ত।' এ কথা বলছিলেন কালুরঘাট ফেরিঘাটে নৌ-দুর্ঘটনায় নিহত আশরাফ উদ্দিন কাজলের বড় ছেলে ফাতিন আশরাফ কানন। কানন বরিশাল মেরিন একাডেমিতে পড়ছে। এবারে ঈদের ছুটিতে বাড়ি এসেছে। এর মধ্যেই বাবাকে হারিয়েছে কানন। আগামী ২৯ জুন একাডেমিতে ফিরে যেতে হবে জানিয়ে কানন বললো, আব্বু মজার মানুষ ছিলেন। ছিলেন। ঈদুল ফিতরের সময় আমরা অনেক আনন্দ করেছিলাম । একসাথে ঘোরাঘুরি, খাওয়া-দাওয়া ও ছবি তুলেছিলাম। এরপর আমাকে একাডেমিতে চলে যেতে হয়েছিল। এর মধ্যে দাদী মারা যান। আমারও বাড়ি আসা হয়নি। কানন জানায়, দুর্ঘটনার দিন বিকেল সাড়ে ৪টায় আব্বু আম্মুকে মোবাইলে জানিয়েছিলেন তিনি মিটিং শেষ করে পটিয়া থেকে শহরে গেছেন। এটাই ছিল পরিবারের সাথে তার শেষ কথা। আর বাড়ি ফেরেননি তিনি। এর আগেরদিন শুক্রবার মায়ের মৃত্যুর ৪০ দিন উপলক্ষে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করেছিলেন। আশরাফ উদ্দিন কাজলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় সুনসান নীরবতা আর শোকতপ্ততা। কাজলের স্ত্রী দিল আফরোজা পারভীন রীতা পৌরসদরের গোমদণ্ডী পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক। মেয়ে রাইসা আশরাফ সাফা নগরীর হাজী মুহাম্মদ মহসিন সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। পরিপাটি সংসার কাজলের কাজলের। । তার বাড়িতে প্রবেশপথের বাম পাশে রয়েছে কবরস্থান। সেখানে বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর হাবিবুর রহমান ও মায়ের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয় কাজলকে।
এদিকে, কাজলের এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না কেউই। কালুরঘাটে একের পর এক দুর্ঘটনায় প্রিয়জন হারানোর যন্ত্রণা ভোগাচ্ছে বোয়ালখালীর বাসিন্দাদের। পশ্চিম গোমদণ্ডী চরখিদিরপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. ইব্রাহীম বলেন, এই কালুরঘাটের ফেরি এক এক করে কেড়ে নিচ্ছে পরিবারের আনন্দ ও ভরসা। আমাদের কাজলও চলে গেলেন। শনিবারের ওই দুর্ঘটনায় নদীতে পড়েও প্রাণে বেঁচে যান সারোয়াতলী ইউনিয়নের ইমামুল্লাচরের বাসিন্দা নূর কাদের। তিনি বলেন, কাজল ভাই নৌকায় আমার পাশে ছিলেন। নৌকাটি ফেরিতে ধাক্কা দিলে আমি আর কাজল ভাই নৌকা থেকে নদীতে পড়ে যায়। সৃষ্টিকর্তা সহায় ছিলেন বলে আমি নদীতে ভেসে উঠে ফেরির কার্নিশ ধরতে পেরেছিলাম। উপস্থিত লোকজন আমাকে টেনে উপরে তুলেছেন। সূত্র: পূর্বকোণ