জিম্বাবুয়ের শুরুর ব্যাটারদের ফেরানো গেল দ্রুতই। কিন্তু ওয়েলিংটন মাসাকাদজা ও ক্লাইভ মাদানদে কল্যাণে তারা পেলে লড়াই করার মতো সংগ্রহ। রান তাড়ায় লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত ব্যর্থ হন। তবে অভিষেকেই আলো ছড়িয়ে দলকে জয় এনে দিয়েছেন তানজিদ হাসান তামিম। শুক্রবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে পাঁচ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথমটিতে জিম্বাবুয়েকে ৮ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। শুরুতে ব্যাট করে ১২৪ রানে অলআউট হয় সফরকারীরা। ওই রান ১৫ ওভার ২ বল খেলে তাড়া করে স্বাগতিক দল।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি জিম্বাবুয়ের জন্য। দ্বিতীয় ওভারেই প্রথম উইকেট হারিয়ে ফেলে তারা। দুই বলে কোনো রান করার আগেই মাহেদী হাসানের বলে বোল্ড হন ক্রেইগ আরভিন। তবে আরেক প্রান্তে ব্রায়ান বেনেট ভরসা জোগাচ্ছিলেন।
৪ ওভার শেষে দলটির ৩১ রান ছিল। কিন্তু তাদের হুট করে খেই হারানোর শুরু হয় পঞ্চম ওভারের শেষ বলে। দীর্ঘদিন পর দলে ফেরা সাইফউদ্দিন নিজের প্রথম ওভারেই উইকেটের দেখা পান। ৪ চারে ১৪ বলে ১৭ রান করে আউট হন জয়লর্ড গাম্বি। ফ্লিক করতে গিয়ে শর্ট ফাইন লেগে দাঁড়ানো তাসকিনের হাতে ক্যাচ দেন তিনি।
মাহেদীর করা পরের ওভারের প্রথম দুই বলে দুই উইকেট হারিয়ে ফেলে জিম্বাবুয়ে। প্রথমটি ছিল রান আউট। শন উইলিয়ামসের সঙ্গে ভুল বুঝাবুঝিতে আউট হন ব্রায়ান বেনেট। ৩ চারে ১৫ বলে ১৬ রান করেছিলেন তিনি। উইকেটে এসে জিম্বাবুয়ের বড় ভরসা সিকান্দার রাজা ফিরে যান প্রথম বলেই।
মাহেদীর বলে প্যাডেল সুইপ করতে গেলে রাজার গ্লাভসে লেগে বল চলে যায় প্রথম স্লিপে দাঁড়ানো লিটন দাসের হাতে। রিভিউ নিলেও সিদ্ধান্ত বদলায়নি। তিন বলে তিন উইকেট হারানো জিম্বাবুয়েকে আরও বেশি চাপে ফেলে দেন তাসকিন আহমেদ।
পাওয়ার প্লের ঠিক পরের ওভারে এসে শেন উইলিয়ামস ও রায়ান বার্লকে সাজঘরের পথ দেখান তিনি। প্রথমে বোল্ড হন উইলিয়ামস। পরের বলে পয়েন্টে রিশাদ হোসেনের হাতে ক্যাচ দেন বার্ল। দুজনেই আউট হন প্রথম বলে, শূন্য রানে। পরের ওভারে এসে ৬ বলে ২ রান করা লুক জংয়েকে আউট করেন সাইফউদ্দিন।
৪১ রানে ৭ উইকেট হারানোর পর জিম্বাবুয়ে আর কত রান করতে পারবে- এটাই ছিল প্রশ্ন। কিন্তু দলটির মূল লড়াই শুরু হয় ওখান থেকেই। ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকে সঙ্গে নিয়ে মাদানদে ইনিংস গড়ার দায়িত্ব নেন। শুরুতে তারা ধীরস্থিরভাবেই খেলছিলেন। কিন্তু শেষদিকে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন তারা।
শরিফুলের করা ১৭তম ওভারে ১১ ও রিশাদ হোসেনের করা পরের ওভারে ১৬ রান নেন মাসাকাদজা ও মাদানদে। এরপর ১৮তম ওভারের প্রথম বলে তাসকিনকেও ছক্কা হাঁকান মাসাকাদজা। এক বল পরই অবশ্য তার সঙ্গী মাদানদেকে বোল্ড করেন তাসকিন। তার ইয়র্কার মাদানদের দুই পায়ের মাঝখান দিয়ে স্টাম্পে আঘাত করে।
অষ্টম উইকেটে জিম্বাবুয়ের রেকর্ড ৬৫ বলে ৭৫ রানের জুটি ভেঙে যায় এতে। ৬ চারে ৩৯ বলে ৪৩ রান করে আউট হন মাদানদে। তার বিদায়ের পর জিম্বাবুয়ের রান হয়নি খুব একটা। শেষ বলে রান আউট হওয়ার আগে ৩৮ বলে ৩৪ রান করেন মাসাকাদজা। বাংলাদেশের হয়ে ৪ ওভারে ১৪ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন তাসকিন। সমান ওভারে ১৬ রান দিয়ে ৩ উইকেট পান সাইফউদ্দিনও।
রান তাড়ায় নেমে দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। ব্লেসিং মুজারাবানির ইনসুইঙ্গারে বোল্ড হন ৩ বলে ১ রান করা লিটন দাস। চাপে পড়ে যাওয়া বাংলাদেশ ৩ ওভারে করে ১০ রান।
এরপর বৃষ্টি নামায় খেলা বন্ধ থাকে। বিরতির পর খেলা শুরু হলে তানজিদ হাসান তামিম হাত খোলেন। দারুণ সব শটে রান করতে থাকেন তিনি। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে আসা মুজারাবানির দেন ১৬ রান, ছয় ওভারে বাংলাদেশের রান হয় ৪২।
এরপর আরেক দফা বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হয়ে যায়। ওই বিরতির পর অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর উইকেট হারিয়ে ফেলে স্বাগতিকরা। ২৪ বলে এবার ২১ রান করে লুক জংয়ের বলে শন উইলিয়মসের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন শান্ত।
তার বিদায়ের পরও আক্রমণাত্মকই থাকেন তানজিদ হাসান তামিম। তার সঙ্গে যোগ দেন তাওহীদ হৃদয়। ৩৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তানজিদ। আগে ওয়ানডে খেললেও এদিনই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হয় তানজিদের। দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে টি-টোয়েন্টি অভিষেকে হাফ সেঞ্চুরি করেন তিনি। এর আগে এমন কীর্তি ছিল জুনায়েদ সিদ্দিকীর। শেষ পর্যন্ত ৮ চার ও ২ ছক্কার ইনিংসে ৪৭ বলে ৬৭ রান করে অপরাজিত থাকেন তানজিদ। ৫ চার ও ১ ছক্কায় ১৮ বলে ৩৩ রান আসে হৃদয়ের ব্যাট থেকে।