তালহা হাসান
রাসুল (সা.) জীবনের বিভিন্ন সময় সাহাবিদের গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ দিয়েছেন। এর মধ্যে অনেক উপদেশ এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে তা শুধু সেই সাহাবির জন্য প্রযোজ্য এমন নয়, বরং মুমিনের জীবন সুন্দর ও শৃঙ্খলাবদ্ধ করতে এসবের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। অনেক সাহাবি এসব উপদেশ বাণী প্রিয় নবীর অসিয়ত হিসেবে বর্ণনা করেছেন। নিম্নে সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.)-কে দেওয়া উপদেশগুলো তুলে ধরা হলো—
মুমিনের জীবনের রূপরেখা : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা একে অন্যের প্রতি হিংসা কোরো না।
(ক্রয় করার ভান করে) দাম বাড়িয়ে অন্যকে ধোঁকা দেবে না। একে অন্যের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে না। একে অন্যের বিরুদ্ধাচরণ করবে না। বেচাকেনায় একজনের প্রস্তাবের ওপর আরেকজন প্রস্তাব দেবে না।
হে আল্লাহর বান্দারা, তোমরা পরস্পর ভাই ভাই হও। একজন মুসলিম অন্য মুসলিমের ভাই। সে অন্যের ওপর অত্যাচার করবে না। অসম্মান করবে না।
তুচ্ছতাচ্ছিল্য করবে না। তাকওয়া তথা আল্লাহভীরুতা এখানে। এ কথা বলে তিনি নিজ বুকের দিকে তিনবার ইশারা করেন। কোনো মুসলিমের মন্দ ব্যবহারের জন্য এটুকু যথেষ্ট যে সে অন্য মুসলিম ভাইকে তাচ্ছিল্য করবে। একজন মুসলিমের জন্য অন্য মুসলিমকে হত্যা করা, সম্পদ লুট করা ও সম্মানহানি করা নিষিদ্ধ। ’ (বুখারি, হাদিস : ৫১৪৪)
সবচেয়ে বড় ধনীর পরিচয় : আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, একদিন রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমার কাছ থেকে কিছু কথা শিখবে, অতঃপর তা অনুসারে আমল করবে? কিংবা এমন কাউকে শিক্ষা দেবে, যে তা অনুসারে আমল করবে।’ আমি বললাম, ‘আমি, হে আল্লাহর রাসুল।’ অতঃপর তিনি আমার হাত ধরে পাঁচটি গণনা করে বললেন। তিনি বলেন, ‘সব ধরনের হারাম কাজ বর্জন করবে। তাহলে তুমি আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি ইবাদতকারী হিসেবে গণ্য হবে। আল্লাহ তোমার জন্য যা রেখেছেন তাতে তুমি সন্তুষ্ট থাকবে। তাহলে তুমি মানুষের মধ্যে সবচেয়ে ধনী হবে। প্রতিবেশীর সঙ্গে সুন্দর আচরণ কোরো। তাহলে তুমি মুমিন হবে। মানুষের জন্য তাই পছন্দ কোরো, যা তুমি নিজের জন্য পছন্দ করো। তাহলে তুমি মুসলিম হবে। বেশি হাসবে না। কারণ বেশি হাসলে অন্তর মরে যায়।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩০৫)
জান্নাতে প্রবেশের আমল : একবার আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমি আপনাকে দেখলে আমার অন্তর প্রশান্ত হয় এবং আমার চোখ শীতল হয়। আপনি আমাকে সব বস্তু সম্পর্কে অবহিত করুন। তখন রাসুল (সা.) বলেন, ‘সব বস্তু পানি থেকে তৈরি করা হয়েছে।’ আমি বললাম, ‘আমাকে এমন বিষয় সম্পর্কে অবহিত করুন আমি তা আঁকড়ে ধরলে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারব।’ তিনি বলেন, ‘সালামের প্রচার কোরো। অন্যকে খাবার খাওয়াও। আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক রাখো। রাতে যখন মানুষ ঘুমায় তখন তুমি নামাজ পড়ো। তাহলে তুমি নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৭৯৩২)
ধ্বংসাত্মক সাত কাজ পরিহার : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা ধ্বংসাত্মক সাত কাজ বর্জন করবে।’ বলা হলো, তা কী? তিনি বলেন, ‘আল্লাহর সঙ্গে অংশীদার স্থাপন করা, জাদু করা, অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা, সুদ খাওয়া, এতিমের সম্পদ খাওয়া, যুদ্ধের সময় পালিয়ে যাওয়া, মুমিন অবলা সতী নারীকে অপবাদ দেওয়া।’ (বুখারি, হাদিস : ২৭৬৬)
Leave a Reply